অন্ধকারেই গাইব গান

In the dark times

Will there also be singing?

Yes, there will also be singing.

About the dark times.”

অন্ধকার সময়েও কি গান হবে?হ্যাঁ, গান হবে, অন্ধকার সময় নিয়েই

পাহাড়ে কখনো অন্ধকার নামে না। সমতলে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে তখন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অন্ধকার ওপরের দিকে ভেসে উঠে। উঠে যেন আকাশ ছুঁতে চায়। আর পাহাড়ের বুকে তখন টুপটাপ করে আলো জ্বলে উঠে, মানুষের ঘরবাড়ির আলো। সেই আলোই অচেনা পাহাড়কে চেনা করে তুলে আমাদের কাছে- সেখানেও আমাদের মতোই ঘরবাড়ি , আমাদের মতোই মানুষ। চেনা কথা, চেনা রাগ, চেনা মান-অভিমান। ধোয়ার মত উঠে আসা অন্ধকার তারপর একসময় ঢেকে দেয় দূরের খেলনা মানুষের ঘরবাড়ি গুলো। রয়ে যায় শুধু অন্ধকারের বুকে ছিটে ছিটে আলো -আর সেই আলোর মধ্যে অপেক্ষা থাকে, যে পরের দিন সূয্যি উঠলে অন্ধকারটুকু পাহাড়ের ঢাল গড়িয়ে নেমে যাবে। অন্ধকার কেটে গেলে আবার ঝলমলিয়ে উঠবে আর্শিনগরের পড়শীর মুখ।

পাহাড়ে অন্ধকার ভেসে ওঠে আর সমুদ্রে অন্ধকার ভেসে আসে সেই দিগন্ত থেকে। সূয্যি ডুবলেই কেউ যেন জলের আবীর রংএ ধীরে ধীরে কালী মেশানো শুরু করে আর তারপর একসময় কালী ছড়িয়ে পরে দিগন্ত রেখা থেকে তটরেখা পর্যন্ত। বিকেলে হেঁটে যাওয়া পায়ের ছাপ গুলো মুছে যায় ভেঙে যাওয়া ঢেউয়ের সাথেই। অন্ধকারে দেখা যায় না কিছুই, এখানে সমুদ্রের বুক বড়োই নিকষ কালো। কিন্তু তাতে মাঝে মাঝে ফুটে ওঠে ঢেউয়ের মাথার ফেনা – দুধ সাদা। এখানেও আলোর মালা জ্বলে তটরেখা জুড়ে – মানুষের অন্ধকার বড়োই অপছন্দ, তাই আলোর মালায় সেজে ওঠে আসে পাশের বসতি, দোকান। তটরেখার কোলের ধার আঁকড়ে থাকা বসতিতে জ্বলে ওঠে আলো, ভেসে আসে সেই পরিচিত জীবনচক্রের টুকরো কথা, আধখানা ছবি। তার তারপর এক সময় সেই সব নিভে গেলে অন্ধকার কে প্রতিস্পর্ধা জানিয়ে শুধু জেগে থাকে অগুনতি ঢেউএর মাথার ফেনা গুলো। তারপর এক সময় রাতের আঁধার কেটে গেলে সমুদ্র আবার স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে – পাহাড়ের মতোই তটে শুরু হয় পরিচিত রোজনামচা

পাহাড়? নাকি সমুদ্র ? কোনটা পছন্দ কার? এ যেন ছকে বাঁধা চেনা প্রশ্ন- যার উত্তরের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের কত ভালবাসার মুহূর্ত, ভালোলাগার স্মৃতি।অজান্তেই পাহাড় আর সমুদ্র জড়িয়ে গেছে আমাদের সম্পর্ক গুলোর মাঝে।আমরা যারা বড়াইল পাহাড়ের পাদদেশের মানুষ, আমাদের হাতছানি দেয় দূর দেশের সমুদ্র। আর দূরের সমুদ্রতটের মানুষ খুঁজে ফিরে পাহাড়ের ছায়াময়তা।

আর এই দুঃসময়ে যেন পাহাড় আর সমুদ্র আমাদের আরো আরো বেশি করে টানে। পাহাড় দেখলে মানুষ বড় উদার হয়। চেরাপুঞ্জির ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সামনে দাঁড়ালে মনে হয় আমাদের মনের কোনের অন্ধকার গুলোও অতল খাদে হারিয়ে যাবে। সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় যে এতো কিছুর পর ও আমাদের দেশের পাহাড় প্রমান হৃদয় সব ক্ষত বুকে নিয়ে অজেয়। পাহাড়ে যেমন মেঘ কেটে গেলে রোদ ঝকমকিয়ে উঠে, একদিন এই সূর্যোদয় দেখতে দেখতেই হয়তো আমাদের হৃদয় সমুদ্রের মতো অবারিত হবে। সেখানে সত্যি নেচে বেড়াবে হরেক রঙা ঝিনুক, সাঁতরে যাবে মাছ। রঙের ছটায় চোখ ধাঁদিয়ে যাবে আমাদের – এক রঙা স্বদেশ বড় পর মনে হয় যে! আর সমুদ্রে কান পাতলে যেমন গান শোনা যায়, তেমন গান বাজবে আমাদের মনেও।

হয়তো সবই নির্বোধের কল্পনা। হয়তো আমাদের অন্ধকার চিরকালীন হয়ে আস্তানা গাড়বে আমাদের ভেতর – হয়তো পাহাড়ের সব সবুজ এক রঙা হয়ে পাথর হয়ে যাবে, কিংবা হয়তো সমুদ্রের তীরে জ্বলবে না আর আলোর মালা। হয়তো আমরা সবাই চুপ করে থাকতে থাকতে সব ভুলেই যাবো একদিন- পাহাড় সমুদ্র সব জনহীন হয়ে পরে থাকবে। তাবলে ততদিন কি গান গাইবো না ? অন্ধকার সময় নিয়েই গান গাইব – রোখে আমাদের কার সাধ্যি।

Leave a comment